মারমা (পাঠ-৫)

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী | NCTB BOOK
899

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে মারমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। মারমা নৃগোষ্ঠীর অধিকাংশই রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় বাস করে। ‘মারমা' শব্দটি 'ম্রাইমা' শব্দ থেকে উদ্ভূত। 

সামাজিক জীবন : পাবর্ত্য অঞ্চলে বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভূক্ত মারমা সমাজের প্রধান হলেন বোমাং চিফ বা বোমাং রাজা । প্রত্যেক মৌজায় কতগুলো গ্রাম রয়েছে। গ্রামবাসী গ্রামের প্রধান মনোনীত করে। মারমারা গ্রামকে তাদের ভাষায় ‘রোয়া এবং গ্রামের প্রধানকে 'রোয়াজা' বলে।
মারমা পরিবারে পিতার স্থান সর্বোচ্চ হলেও পারিবারিক কাজকর্মে মাতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। মারমা সমাজে পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মেয়েদের মতামত বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

অর্থনৈতিক জীবন : মারমাদের জীবিকার প্রধান উপায় হচ্ছে কৃষি। তাদের চাষাবাদের প্রধান পদ্ধতিকে জুম বলা হয়৷

ধর্মীয় জীবন : মারমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তারা এ ধর্মেরই অনুষ্ঠানাদি উদযাপন করে। প্রায় প্রত্যেকটি মারমা গ্রামে বৌদ্ধবিহার ‘কিয়াং' এবং বৌদ্ধ ভিক্ষু 'ভাঙে'দের দেখা যায়। মারমারা বৈশাখী পূর্ণিমা, আশ্বিনী পূর্ণিমা, কার্তিকী পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা ইত্যাদি দিনগুলোতে বৌদ্ধমন্দিরে গিয়ে ফুল দিয়ে এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে বুদ্ধের পূজা করে। কাপ্তাইরের অনতিদূরে চন্দ্রঘোনার কাছে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত 'চিরম বৌদ্ধবিহার' মারমাদের নির্মিত একটি খুবই সুন্দর বৌদ্ধমন্দির। প্রতি বছর বহু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সেখানে বুদ্ধ প্রণাম ও পূজা করতে যায় ।

সাংস্কৃতিক জীবন : মারমাদের ঘরবাড়ি বাঁশ, কাঠ ও ছনের তৈরি যা কয়েকটি খুঁটির উপর মাটি থেকে ৬-৭ ফুট উপরে নির্মিত হয়।

মারমা পুরুষেরা মাথায় 'বং' (পাপড়ি বিশেষ), গারে জামা ও লুঙ্গি পরে। নারীরা পায়ে যে রাউজ পরে তার নাম 'আঞ্জি', এছাড়াও তারা 'থামি' পরে। কাপড় বোনার কাজে মারমা নারীরা দক্ষ । তাদের মধ্যে হস্তচালিত ও কোমর উভয় ধরনের তাঁতের ব্যবহার রয়েছে।
মারমারা পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মতো ভাতের সাথে মাছ-মাংস ও নানা ধরনের শাকসবজি খায় ।

মারমারা পুরাতন বর্ষকে বিদায় ও নববর্ষকে বরণ উপলক্ষে সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন করে। এ সময় তারা 'পানিখেলা' বা 'জলোৎসব'-এ মেতে উঠে। এই উৎসবে পানিখেলার নির্দিষ্ট স্থানে নৌকা বা বড় পাত্রে পানি রাখা হয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই উৎসব বেশ আনন্দ-উদ্দীপনার সাথে উদযাপিত হয়ে থাকে।

কাজ : মারমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করো।

জীবনব্যবস্থাবৈশিষ্ট্য
সামাজিক 
অর্থনৈতিক 
সাংস্কৃতিক 
ধর্মীয় 
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...